স্পট ফিক্সিংয়ের সাজার মেয়াদ কাটিয়ে তাঁর ফেরাটা ছিল দুর্দান্ত। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে উইকেটের মুখ দেখেছিলেন প্রথম ওভারেই। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ২০১৫ বিপিএলেও ৯ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট। এ ছাড়া মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স ছিল ২০১৬ এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও। কিন্তু দুবাইয়ে সর্বশেষ এশিয়া কাপে মোটেও ভালো করতে পারেননি মোহাম্মদ আমির। এ মাসের শুরুতে ছিটকে পড়েন তিন সংস্করণের পাকিস্তান দল থেকেই। ধূমকেতুর মতো ক্যারিয়ার শুরু করা আমির কি তবে ফুরিয়ে গেলেন? ওয়াসিম আকরাম তা মনে না করলেও উত্তরসূরির ফর্ম নিয়ে বেশ চিন্তিত।
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা আমির সর্বশেষ ১৩ ওয়ানডের মধ্যে ৮টিতেই উইকেটশূন্য। টেস্টে সর্বশেষ এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন গত বছরের এপ্রিলে। কিন্তু এ বছর নিজের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেননি তিনি। এ বছর ১০ ওয়ানডে খেলা আমিরের উইকেটসংখ্যা ৩, গড় ১০০.৬৬! আর ৩ টেস্ট খেলে পেয়েছেন ১২ উইকেট। যেখানে এ বছর টেস্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট ৪৬ আর ওয়ানডেতে ৪৮। টি-টোয়েন্টিতে এ বছর তেমন ভালো করতে পারেননি আমির। ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট, যেখানে বছরের সর্বোচ্চ উইকেটসংখ্যা ১৯ ম্যাচে ৩১।
আমিরের এই পড়তি ফর্মের কারণ হিসেবে পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম মনে করেন, নতুন বলে ব্যাটসম্যানের ভেতরের দিকে সুইং না পাওয়ায় তাঁর বলে ধার কমেছে। নিজের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আকরাম বলেন, ‘আমিরের গতি আছে। পাকিস্তান ক্রিকেটে সে এখনো অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন। কিন্তু নতুন বলে তাঁর ডেলিভারিগুলো আর সুইং করে ভেতরে ঢুকছে না। ক্যারিয়ারের শুরুতে এবং নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরও কিছুদিন এই ডেলিভারিগুলো দেখা গেছে আমিরের কাছ থেকে। ব্যাটসম্যানদের জন্য ডেলিভারিটা বেশ মারাত্মক। বল পিচ করে ভেতরের দিকে ঢোকে। ব্যাট আর প্যাডের মধ্যে ফাঁক থাকলে বোল্ড কিংবা ফুটওয়ার্ক এলোমেলো হলে লেগ বিফোরের সম্ভাবনা বাড়ে। মোটামুটি গত এশিয়া কাপ থেকেই আমির এই ইনসুইং ডেলিভারিটি হারিয়ে ফেলেছেন।
আমির তাহলে কি ভুল করছেন? ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা বাঁমহাতি পেসার হিসেবে স্বীকৃত আকরাম ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘খুব কাছ থেকে দেখিনি। গত পিএসএলের সময় ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলেছি, বল ছাড়ার সময় হাতটা বেশি ওয়াইড (সাইড থেকে) থাকে। অর্থাৎ ডান দিকে ঝুঁকে পড়ে। যে কারণে বোলিংয়ের হাতটা ডেলিভারির সময় ঝুঁকে পড়ার দিকেই থাকে, আর তাই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে বল ভেতরে ঢোকার বদলে বেরিয়ে যায়।
এসব কথা বলার সঙ্গে আকরাম নিজেও হাত ঘুরিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন আমিরের ভুলটা কোথায় হচ্ছে। সমাধানও দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৯১৬ উইকেট নেওয়া এই পেসার, বল করার সময় স্টাম্পের সঙ্গে দূরত্বটা তিন ইঞ্চি কমালে প্রত্যাশিত ফল মিলতে পারে। এভাবে ছয় মাস অনুশীলন করতে হবে। ব্যাপারটা কিন্তু সহজ না। কারণ, অভ্যস্ত অ্যাকশন পাল্টাতে যেকোনো বোলারেরই সময় লাগে। কারণ ওই অ্যাকশনে বল করায় মানসিকভাবে ‘সেট’ হয়ে গেলে অনুশীলনের শুরুর দিকে স্টেপিং ল্যান্ডিং কিংবা ‘ফলো-থ্রু’ আগের মতোই হবে। আকরাম টোটকা দিলেন, কমপক্ষে ছয় মাস প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে। তাহলে প্রত্যাশিত জায়গায় ল্যান্ডিং (বল ছাড়ার সময় পায়ের ধাপ) করা সম্ভব। সুলতান অব সুইং খ্যাত আকরামের এই ‘ব্যবস্থাপত্র’ ২৬ বছর বয়সী আমির এখন কীভাবে মেনে চলেন সেটাই দেখার বিষয়।