একাদশ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন এনে ‘চমক’ দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এ তালিকা থেকে বাদ পড়া আলোচিত ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের নিয়ে বিকল্প চিন্তা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। বিএনপি ও তার মিত্রদলগুলোর প্রার্থীর তালিকা দেখে তারা তাদের তালিকায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে- এমনটাই দলটির নেতারা নিশ্চিত করেছেন একুশে নিউজ কে।
রোববার জোট শরিকদের ছাড়াই ২৩০টি আসনে মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে দলটি। এতে দেখা যায়, দশম জাতীয় সংসদে যারা এমপি ছিলেন তাদের অধিকাংশই এবারো দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন। তবে নতুন মুখ যোগ হয়েছে প্রায় অর্ধশত। পাশাপাশি বাদ পড়েছেন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিসহ হেভিওয়েট বেশ কয়েক নেতা। আর এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন ১৬ নারী। বাকি ৭০টি আসন মহাজোটের শরিকদের (জাতীয় পার্টি, ১৪ দলীয় জোট, যুক্তফ্রন্টসহ অন্যান্য দল) জন্য রাখা হয়েছে।
বাদ পড়া হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-১৩ আসনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন মনোনয়নপ্রত্যাশী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, মাদারীপুর-৩ আসনে শেষ পর্যন্ত দৌড়েও মনোনয়ন পাননি সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও টাঙ্গইল থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তাদের মনোনয়নের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন। নিজ আসন থেকে বঞ্চিত হলেও হেভিওয়েট নেতাদের অন্য কোনো আসনে নৌকার টিকিট দিতে পারে বলে জানিয়েছেন একটি সূত্র।
দলের আরেকটি সূত্র বলেন, এবার আলোচিত-সমালোচিত এবং বিতর্কিত মন্ত্রী ও এমপিদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই মনোনয়ন দেয়ার ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে দলের হাইকমান্ডের। অন্য দলের প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই করার জন্যও এমনটি করতে পারে ক্ষমতাসীন দল। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরোধিতা রোধের জন্যও এ রকম মনোনয়ন দেয়া হয়ে থাকতে পারে। বিরোধীদের ওপর চাপ তৈরি করতে কিছু প্রার্থীর হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদের ভোটে রাখা হবে কিনা, তা দলের হাইকমান্ড ছাড়া আর কেউ জানে না। সেখানে আনা হবে নতুন কোনো প্রার্থীকে। মনোনয়ন দৌড়ে বাদ পড়া নেতাদের কপাল খুলতে পারে নির্বাচনের প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ সময়ে। তাই আগামী ৯ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কারা হচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে সূত্র জানিয়েছেন। কারণ, এ দিন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমণ্ডিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মনোনয়ন চিঠির সঙ্গে প্রত্যাহারপত্রেও স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, কোনো কোনো আসনে মনোনয়নের চিঠি দুটিও দেয়া হয়েছে। এটি টেকনিক্যাল কারণে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রার্থী বদলও হতে পারে। অন্য প্রার্থী বেশি শক্তিশালী হলে দলের প্রার্থী বিবেচনা করা হবে।
একাদশ নির্বাচনে বার্ধক্যজনিত কারণে গাজীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পাননি সাবেক মন্ত্রী রহমত আলী। বাদ পড়েছেন টাঙ্গাইলের আলোচিত এমপি আমানুর রহমান খান রানা। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে বাদ পড়েছেন অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। শরীয়তপুর-১ আসন থেকে বিএম মোজাম্মেল হক ও ২ আসনে শওকত আলী মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন পাননি কক্সবাজারের সমালোচিত এমপি আবদুর রহমান বদি, তবে ওই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নাই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু একুশে নিউজ কে বলেন, শেষ সময়ের প্রার্থী পরিবর্তন করাটা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী চাইলে পরিবর্তন করতে পারেন।