প্রথম দিনে যা ছিল ইঙ্গিত, দ্বিতীয় দিনে তা যেন পূর্ণ রূপে প্রকাশিত। চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিন দাপটে নাকাল দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই। শুক্রবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিন দেখেছে তিন ইনিংসের মুখ। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের লিড পেলেও দিনশেষে অর্ধেক উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে কেবল ১৩৩ রানে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৩২৪ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ২৪৬ রানে। অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন নাঈম হাসান।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশও পেয়েছে ক্যারিবিয়ান স্পিনের আঁচ। দিন শেষ করেছে ৫ উইকেটে ৫৫ রানে।
এক দিনে পতন হয়েছে ১৭ উইকেটের, বাংলাদেশে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে একদিনে পড়েছিল ১৮ উইকেট।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস দিয়ে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় দিন। নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের প্রতিরোধ এ দিন আর দীর্ঘ হয়নি। নবম জুটি ভেঙেছে ৬৫ রানে। আগের দিনের সঙ্গে শেষ দুই জুটিতে যোগ হয়েছে কেবল ৯ রান।
টার্ন ও বাউন্স আগের দিনের চেয়ে বেশি ছিল সকাল থেকেই। কাইরান পাওয়েল ও ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট তবু প্রথম ১০ ওভার কাটিয়ে দেন নিরাপদে। পাওয়েল অবশ্য ২ রানে জীবন পান মুশফিকের হাতে।
পাওয়েলকে ফিরিয়েই বাংলাদেশ পেয়েছে ব্রেক থ্রু। তাইজুল ইসলামকে সুইপ করতে গিয়ে বাঁহাতি ওপেনার ফেরেন ১৩ রানে।
পরের ওভারেই সাকিব ঝলক। চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরে প্রথম বলেই উইকেট। বোল্ড শেই হোপ। এক বল পরই পেতে পারতেন আরেকটি। কিন্তু আবারও ক্যাচ ছাড়লেন মুশফিক, ব্যাটসম্যান এবার সুনিল আমব্রিস।
হতাশা ভুলে দুই বল পরই সাকিব পেয়ে যান দ্বিতীয় উইকেট। এবারের শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ও সবচেয়ে বড় ভরসা ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট।
চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন আমব্রিস ও রোস্টন চেইস। ১৮ রানে চেইস জীবন পান সাকিবের বলে মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে। ১৫ রানে আমব্রিসকে স্টাম্পিং করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মুশফিক।
৪৬ রানের এই জুটি ভেঙেই নাঈম জানান দেন নিজের আগমনী বার্তা। নিজের পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে দেন দুজনকেই।
ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা সময়টি আসে এরপরই। বিপর্যয়ে নেমেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের স্পিনারদের হকচকিয়ে দেন শিমরন হেটমায়ার। দ্রুত রান ওঠায় উল্টো চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশই।
জুটি যখন সেঞ্চুরির কাছে, চার ছক্কায় ৪৭ বলে ৬৩ রান করা হেটমায়ারকে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে আড়াইশর কাছে নিয়ে যান শেন ডাওরিচ। তিন ছক্কায় কিপার ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৬৩ রানে।
লোয়ার অর্ডারে আরও তিন উইকেট নিয়ে নাঈম পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। প্যাট কামিন্সকে এক ধাপ নামিয়ে গড়েন টেস্ট অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেটের রেকর্ড। অভিষেকের দিনটিতে নাঈমের বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৫৫ দিন।
৭৮ রানের লিড পাওয়ার স্বস্তি উবে যায় বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার পরপরই। ক্যারিবিয়ান স্পিনারদের ভালো বোলিং তো ছিলই, তার চেয়েও বেশি ব্যাটসম্যানদের বাজে ফুটওয়ার্ক। আলগা ড্রাইভে বোল্ড ইমরুল কায়েস, বাইরের বল তাড়া করে আউট সৌম্য সরকার।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক আউট পেছনে খেলে। উইকেটে যাওয়ার পরপরই সুইপ করে উড়িয়ে বিদায় সাকিবের। সামনে খেলার বল দৃষ্টিকটুভাবে পেছনে খেলে বোল্ড মিঠুন।
দলকে স্বস্তি দিয়ে বিকেলটা টিকে গেছেন মুশফিকুর রহিম। তবে নিরাপদ ঠিকানা এখনও খানিকটা দূর। অনেকবার রঙ বদলানো দিন শেষে উজ্জ্বল কোন দল, সেটিই বোঝা কঠিন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯২.৪ ওভারে ৩২৪ ( আগের দিন ৩১৫/৮)(নাঈম ২৬, তাইজুল ৩৯*, মুস্তাফিজ ০; রোচ ১৭-২-৬৩-১, গ্যাব্রিয়েল ২০-২-৭০-৪, চেইস ১১-০-৪২-০, ওয়ারিক্যান ২১.৪-৬-৬২-৪, বিশু ১৫-০-৬০-১, ব্র্যাথওয়েট ৮-১-১৯-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৬৪ ওভারে ২৪৬ (ব্র্যাথওয়েট ১৩, পাওয়েল ১৪, হোপ ১, আমব্রিস ১৯, চেইস ৩১, হেটমায়ার ৬৩, ডাওরিচ ৬৩, বিশু ৭, রোচ ২, ওয়ারিক্যান ১২, গ্যাব্রিয়েল ৬*; মুস্তাফিজ ২-১-৪-০, মিরাজ ১৫-০-৬৭-১, তাইজুল ২০-৩-৫১-১, সাকিব ১১-৩-৪৩-৩, নাঈম ১৪-২-৬১-৫, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৭-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৭ ওভারে ৫৫/৫ (ইমরুল ২, সৌম্য ১১, মুমিনুল ১২, মিঠুন ১৭, সাকিব ১, মুশফিক ১১*, মিরাজ ০*; রোচ ১-০-১১-০, ওয়ারিক্যান ৮-০-২২-২, চেইস ৫-১-১৬-২, বিশু ৩-০-৫-১)।