রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর চারতলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে থাকত শিশু আয়েশা (২)। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যান। এই সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনে গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্যান্য দিনের মতো গত শনিবারও বিকালে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আয়েশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নাহিদ (৪৫) শিশুটিকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরে নাহিদ চারতলা ভবনের তিনতলা থেকে তাকে নিচে ফেলে হত্যা করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। রবিবার নিহত শিশুর পিতা ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সোমবার দুপুরে দীননাথ সেন রোডের এলাকাবাসী আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে গেন্ডারিয়া থানা ঘেরাও করে।
গেন্ডারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব আলম বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর আয়েশাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণার পর লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের পর গতকাল জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। উদ্ধারের সময় আয়েশার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে আয়েশার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যাবে।
তিনি আরো বলেন, মামলার বাদী ও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার বিকালে ওই বাড়ি থেকে নাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। নাহিদ পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ব্যবসা করতেন। তবে বর্তমানে তিনি ব্যবসা করেন না। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি ফের বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদের সংসার ছেড়ে চলে গেছেন। তাকে কিছুটা হলেও মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়।
আয়েশার মামা মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, আয়েশাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন চারতলা বাড়ির মালিক নাহিদ। তিনি ভবনের তিনতলায় থাকেন। আয়েশা বিকেলে যখন খেলছিল, তখন তাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান নাহিদ। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ফ্ল্যাটের খোলা বারান্দা থেকে আয়েশাকে নিচে ফেলে দেন নাহিদ। এ সময় আয়েশার চিত্কার আশপাশের লোকজনও শোনে। আয়েশাকে নিচে ফেলার শব্দ বাড়ির পাশের মাঠ থেকে কয়েকজন যুবক শুনতে পান। এলাকার লোকজন এসে আয়েশার রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়।