রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন

‘সিঙ্ঘম’ হতে গিয়ে বেকায়দায়, ডিএম

একুশে নিউজ
  • প্রকাশিত সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:২৪
  • ১৯৮ এই সময়
  • শেয়ার করুন

রিলের ‘সিঙ্ঘম’ আর ‘রিয়েল’-এর মধ্যে ফারাক যে অনেকটাই তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল। শনিবার ওই জেলারই ফালাকাটা থানায় ঢুকে তাঁর স্ত্রী এবং তিনি এক যুবককে কিল-চড়-লাথি মারছেন— সেই ভিডিয়ো এখন দেশ জুড়ে ভাইরাল।

শীর্ষস্থানীয় এক জন আমলা কী ভাবে থানায় ঢুকে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তার ঢেউ পৌঁছেছে নবান্নেও। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই মুখ্য সচিবের দফতর থেকে ওই জেলাশাসককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের অনেক শীর্ষ আমলাই মনে করেন নিখিল যা করেছেন, তা গর্হিত অপরাধ এবং তাঁর কড়া শাস্তি হতে পারে। নবান্ন সূত্রে খবর, জেলাশাসককে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সোমবার দুপুরে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব সামলাবেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।

কেরলের কোচির বাসিন্দা নিখিল নির্মল ২০০৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৩৭২তম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হওয়ার আগে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করেন। একই সঙ্গে তাঁর রয়েছে আইনের স্নাতক ডিগ্রি। পৃথক জেলা তৈরি হওয়ার আগে ২০১১ ব্যাচের এই আমলা ছিলেন আলিপুরদুয়ারের শেষ মহকুমাশাসক। এর পর তিনি উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক পদে ছিলেন। অবিভক্ত বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকের দায়িত্বও সাফল্যের সঙ্গে পালন করেন। জেলা ভাগ হওয়ার পর তিনি অতিরিক্ত জেলাশাসকের দায়িত্ব পান পূর্ব বর্ধমান জেলায়। রাজ্যের এক শীর্ষ আমলা বলেন, “নিখিল খুব ভাল অফিসার। নতুন ভাবে অনেক কিছু ভাবতে পারেন। নতুন অনেক আইডিয়া দেন। মালয়ালী ওই যুবক ভীষণই যোগ্য।”

অন্য দিকে হাওড়া এবং বর্ধমানে তাঁর অধীনস্থ আধিকারিকদের বক্তব্য, “নিখিল নির্মল খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভালবাসেন। তিনি বার বার প্রশাসনকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দিতে বলতেন সবাইকে।” গত বছরই জুন মাসে পদোন্নতি পেয়ে তিনি আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের দায়িত্ব পান।


থানায় ঢুকে যুবককে মারধর করেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল। 

দায়িত্ব নেওয়ার পরই তাঁর দু’টি সিদ্ধান্ত নজর কাড়ে। জেলার সর্বত্র সমস্ত খাবারের দোকানে খাদ্যের গুণমান পরীক্ষার জন্য বিশেষ অভিযানের নির্দেশ দেন। ঘনিষ্ঠদের নিখিল জানিয়েছিলেন, কোচিতে তাঁর এক বন্ধু সেখানকার একটি নামী রেস্তরাঁর খাবার খেয়ে মারা গিয়েছিলেন। খাবারে বিষক্রিয়া হওয়ার কারণেই ওই মৃত্যু। তিনি চাইতেন, তাঁর জেলার মানুষ যাতে ঠিকঠাক খাবার পায়। জেলাশাসকের নির্দেশে অনেক হোটেল-রেস্তরাঁয় খাবারের মান এবং পরিচ্ছন্নতা বেড়েছে তা স্বীকার করেন আলিপুরদুয়ার শহরের অনেক বাসিন্দাই। তাঁর দ্বিতীয় উদ্যোগটি ছিল, জেলার চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করা। চা-বাগান এবং সংলগ্ন গ্রামে সরকারি স্কুল থাকলেও সেখানে শিক্ষার মান ছিল খারাপ। অনিয়মিত ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। এমন ৭৩টি গ্রামে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে অনেকটাই শুধরে দেন প্রাথমিক স্কুলগুলির হাল। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই স্কুলগুলোয় বিশুদ্ধ পানীয় জলের বন্দোবস্তও করে দেন জেলাশাসক।

কিন্তু শনিবারের ‘সিঙ্ঘম’ বিতর্ক পেছনে ফেলে দিয়েছে নিখিলের ভাল কাজের খতিয়ান। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নিখিলের ঘনিষ্ঠ আধিকারিকরা গোটা ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন পুলিশকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক আধিকারিক বলেন, “মেনে নিলাম জেলাশাসক নিজে থানায় চলে গিয়েছেন। তাঁকে সামলানো যাচ্ছিল না। কিন্তু পুলিশ তো একটু সতর্ক হতে পারত। আইসি নিজে সামনে বসে গোটা ঘটনা দর্শকের মতো দেখলেন। অথচ তিনি আটকানোর চেষ্টা করলেন না!” অশান্তির সময়ে দার্জিলিং সামলে আসা আইসি সৌম্যজিৎ রায় যদিও পুলিশ মহলে অত্যন্ত দক্ষ অফিসার হিসাবে পরিচিত।


একটি অনুষ্ঠানে মেয়েদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল। 

ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এক জন নয়, অন্তত তিন জন থানার ওই ঘরে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করছেন। অর্থাৎ জেলাশাসক বা ফালাকাটা থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায় ভাল করেই জানতেন গোটা ঘটনা ভিডিয়ো করা হয়েছে। আর সেই ভিডিয়ো বাইরের লোকের কাছে পৌঁছতে পারে। তার পরেও পুলিশ কেন সতর্ক হল না? প্রশ্ন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের। যদিও পুলিশ কর্তাদের একাংশের সাফাই, তাঁরা জেলাশাসক এবং তাঁর স্ত্রী-র রুদ্ররূপ দেখে আটকাতে পারেননি। আর ভিডিয়ো প্রসঙ্গে পুলিশের একটা অংশের সাফাই, জেলাশাসক নিজেই গোটা ঘটনা লুকাতে চাননি। পরোক্ষ ভাবে তিনি চেয়েছিলেন গোটা জেলায় তাঁর ওই ‘দাবাং’ রূপ দেখিয়ে বার্তা দিতে যে, মহিলাদের বিরক্ত করলে ফল ভাল হবে না।

পুলিশের অন্য একটা অংশ যদিও জেলাশাসকের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, আগে মহকুমাশাসক হিসাবে আলিপুরদুয়ারে কাজ করার জন্য গোটা জেলাটাই তাঁর পরিচিত। পরে তিনি জেলাশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, একাধিক সিদ্ধান্ত তাঁকে বেশ জনপ্রিয় করে তোলে। সেই সঙ্গে যোগ হয় তাঁর স্ত্রী-র ভূমিকাও। এর্নাকুলামের বাসিন্দা নন্দিনীর সঙ্গে নিখিলের বিয়ে হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। নন্দিনী আলিপুরদুয়ারে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ছোট্ট্ ওই জেলা শহরে জনপ্রিয়তা পান তাঁর স্ত্রীও। পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, আর তাই বড্ড বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৩২ বছরের ওই আমলা।

সেই জনপ্রিয়তা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অন্য ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন জেলার কিছু সরকারি আধিকারিক। তাঁদের দাবি, রিলের ‘সিঙ্ঘম’-এর মতো বাস্তবে ওই আমলা জেলার রাজনৈতিক দাদা-নেতাদের বিশেষ পাত্তা দিতেন না। সিদ্ধান্ত নিতেন নিজেই। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক নেতা বা বিধায়কের সঙ্গে সংঘাত না হলেও অস্তিত্ব সঙ্কট হচ্ছিল অনেক নেতারই। তাই জেলা প্রশাসনের একাংশের ইঙ্গিত, জেলাশাসকের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পিছনে অনেক অঙ্কই লুকিয়ে আছে।

ছবি সৌজন্যে: আলিপুরদুয়ার ডিএম-এর ফেসবুক পেজ।

তথ্য- আনন্দবাজার

এই বিভাগের আরো খবর

ব্রেকিং:

লঘুচাপের প্রভাবে অব্যাহত থাকবে বৃষ্টি

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতাই কি দেশে ফেরাবে শেখ হাসিনাকে?

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

তাপমাত্রা কমতে পারে ৫ ডিগ্রি

আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মোজাম্মেল বাবু

পাকিস্তান সীমান্তের কাছে ইরানের ৩ সীমান্তরক্ষীকে হত্যা

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি গ্রেপ্তার

১১ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি

একটি মহল মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে: ফাহিম

সেভেন সিস্টার্সের ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকেছে চীনা সৈন্যরা