শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

লাল সবুজে মোড়ানো সৈয়দ আশরাফের কফিন

একুশে নিউজ
  • প্রকাশিত সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৩৭
  • ১৮৯ এই সময়
  • শেয়ার করুন

ব্যাংককের একটি হাসপাতালে মারা যাওয়া আশরাফের মরদেহ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তার মরদেহ গ্রহণে সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় আশরাফের কফিন উড়োজাহাজ থেকে নামানো হয়। সেখানেই তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা। জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এই মুক্তিযোদ্ধার কফিন।


বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ‘মেঘদূত’ থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কফিন নিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ছবি – একুশে নিউজ

এরপর সৈয়দ আশরাফের মরদেহ আনা হয় ঢাকার বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে। বিকাল থেকেই সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সহ্রসাধিক মানুষ।

বাড়ির ভেতরের খোলা জায়গায় সামিয়ানা টাঙিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ করে সেখানে সৈয়দ আশরাফের কফিন রাখা হয়। এরপর সারি ধরে দাঁড়িয়ে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ, যাদের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণির পেশার মানুষ ছিলেন। 

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক প্রয়াত নেতার কফিনে ফুল দেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, সংসদ সদস্য আসলামুল হক ও সাদেক খানসহ অনেক নেতাই উপস্থিত হন শ্রদ্ধা জানানোর মিছিলে।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতাদের অধিকাংশই বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফের মরদেহ গ্রহণের জন্যে।

সততা, নির্মোহ ও নির্লোভ মানসিকতা এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় নিজের দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছেও শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববারের ভোটে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

সেখানে পরাজিত প্রার্থী বিএনপি নেতা রেজাউল করিম চুন্নুও ছিলেন তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোদের দলে। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুল আলমও ছিলেন তার সঙ্গে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ছিলেন। তার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।

তিনি একুশে নিউজকে বলেন, “আমি আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে যে কয় দিন কাজ করেছি দুজনের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। আমার আর উনার মতামতে মিল ছিল সব সময়ই। তিনি একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন।

“উনি এতই ভালো মানুষ ছিলেন যে, পূর্ণমন্ত্রী হয়ে আশরাফ ভাই মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর যতো দিন আমার নতুন অফিসে মালামাল গোছানো না হয়েছে ততো দিন তিনি নিজের রুমে বসেননি। আমি আমার কক্ষে বসার পর থেকে তিনি ওই কক্ষে বসতেন। উনার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী মানুষ ছিলেন।”

সহকর্মী হিসেবে সৈয়দ আশরাফের কাছ থেকে সব সময় সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানিয়ে ইসমত আরা সাদেক বলেন, “যে কোনো কাজে আশরাফ ভাইয়ের কাছে গেলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। সব সময় দিক নির্দেশনা দিতেন। অফিসে কম গেলেও কোনো ফাইল পড়ে থাকত না।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, “সৈয়দ আশরাফ বিনয়ী ভদ্র নম্র ব্যক্তি। টেলিফোন ধরতেন না তিনি। তবে উনার সঙ্গে দেখা করে যদি টেলিফোন করার বিষয়টি বলা হত তাহলে কাজটি সহজে হয়ে যেত, যথাযথভাবে করতেন তিনি। তখন আর ক্ষোভ থাকতে না। তাকে হারিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।”

সাবেক সহযোদ্ধা-সহকর্মীর স্মৃতিচারণ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “এক সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। উনি চলে যাওয়ায় দল ও দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়।

“তিনি সব সময় নেত্রীর পাশে ছিলেন। আমি মনে করি, বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা উনাকে অনুসরণ করলে অনেক এগিয়ে যাবে।”

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মারা যান ৬৭ বছর বয়সী আশরাফ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘মেঘদূত’ উড়োজাহাজে তার মরদেহ নিয়ে আসেন ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম, বোন রাফিয়া নূর লোপা ও জাকিয়া নূর লিপি এবং তার একমাত্র মেয়ে রীমা ইসলাম। বিমানবন্দরে নেমেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

উড়োজাহাজ থেকে সৈয়দ আশরাফের কফিন নামানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সে সময় অনেকেরই চোখ ছলছল করতে দেখা যায়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ গ্রহণ করেন সৈয়দ আশরাফের চাচাত ভাই সাফায়েত উল ইসলাম। বেইলি রোডের বাসায় সৈয়দ আশরাফের আরেক ভাই ডাক্তার সৈয়দ শরিফুল ইসলামকেও দেখা যায়।

সৈয়দ আশরাফের মরদেহ আসার আগে বিকেল ৫টার কিছু সময় পার হতেই বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোহাম্মদ নাসিম, শাহজাহান খান, আব্দুর রাজ্জাক, ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতারা সেখানে অপেক্ষা করেন।

সে সময় ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পর পর দুই বার তাকে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার চলে যাওয়া দলের অপূরণীয় ক্ষতি। রাজনীতি অনেকেই করেন, এদের মধ্যে ভালো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সৈয়দ আশরাফ তাদের মধ্যে বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।” 

সন্ধ্যা ৭টার পর বেইলি রোডের বাসায় পৌঁছায় সৈয়দ আশরাফের মরদেহ। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি শেষবারের মতো এই নেতার মুখ দেখেন সহকর্মী, সহযোদ্ধা ও স্বজনরা। সৈয়দ আশরাফের জন্য বেইলি রোডের ওই বাসায় একটি শোক বইও খোলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর

ব্রেকিং:

আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পাকিস্তানের

১৭ জেলায় হতে পারে ৬০ কিমি বেগে ঝড়, সতর্ক সংকেত

সরকারি হাসপাতালগুলোতে আছে রাসেল’স ভাইপারের এন্টিভেনম

বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে, কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণের শঙ্কা

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অচল ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

স্ত্রীকে ফেসবুক থেকে দূরে রাখা নিষ্ঠুরতার শামিল

রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়ি ঘিরে রেখেছে এটিইউ

ধনী কর্মকর্তাদের সম্পদের উৎসের খোঁজ শুরু করছে দুদক

টি-২০ বিশ্বকাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরার পুরস্কার পেলেন যারা

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মানতে হবে যেসব বিশেষ নির্দেশনা