প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে পবিত্র বড়দিন উপলক্ষে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বলেন। সকল ধর্মের মানুষের আবাসস্থল এই বাংলাদেশে সবারই স্বাধীনভাবে নিজস্ব ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। ‘সকল ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য বাংলাদেশে এখন চমৎকার পরিবেশ বজায় রয়েছে এবং সকলেই তাঁদের নিজ নিজ ধর্মের মত অন্যের ধর্ম-কর্মকেও সম্মান করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যারা এদেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছে এবং যারা এদেশের সন্তান তারা স্বাধীনভাবে নিজস্ব ধর্ম পালন করবে।’
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ সকলে একসঙ্গে উৎসব উদযাপন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন,
‘বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি পহেলা বৈশাখ আমরা সকলে মিলে উদযাপন করি। কারণ ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার এবং আমরা মনে প্রাণে এই নীতিতে বিশ্বাস করি।’
এ প্রসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ বিনির্মাণের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চাইতেন এদেশে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকমুক্ত শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় তাঁর দৃঢ় সংকল্পের কথা পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে যেখানে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস এবং মাদকের স্থান হবে না। আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়তে চাই এবং যেখানে জনগণ শান্তিতে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে লক্ষ্য নিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন আমরা তেমনভাবেই বাংলাদেশকে গড়তে চাই। আমরা চাই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।
বাংলাদেশ খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য রেমন আরেং, বাংলাদেশ খ্রীস্টান লীগের সাধারণ সম্পাদক ড্যানিয়েল ডি’কষ্টা, জুয়েল আরেং এমপি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বড়দিন উপলক্ষে সমগ্র বিশ্বের খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তাঁর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যীশুখ্রীষ্ট সবসময় মানবতার জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (যীশুখ্রীষ্ট) মানুষকে ভালবাসতে এবং ভালো কাজের শিক্ষা দিয়েছেন।’
মানব প্রেম এবং বাংলাদেশের ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও তাঁর সমগ্র জীবনকে মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছিলেন বলেও তিনি এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই দারিদ্রের হার আরো ৫ থেকে ৬ ভাগ কমিয়ে আনবো ইনশাল্লাহ এবং দেশে কোন হত দরিদ্র থাকবে না, সেটা আমরা নিশ্চিত করবো যদি পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য অর্জনেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই মর্যাদা ধরে রেখেই দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশকে বলা হত দুর্ভিক্ষ, ঘূর্ণিঝড় এবং মহামারীর দেশ কিন্তু দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে এই দুর্নাম আমরা ঘোচাতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেছিলাম। আজকে সেই দিন বদল হওয়া শুরু হয়েছে।
জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশে এখন আর কোন খাদ্য সংকট নেই এবং দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর হয়ে গেছে।
তার সরকার মানুষের কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে।’
পরে তিনি বড় দিন উপলক্ষে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদর নিয়ে বড় দিনের কেক কাটেন।
অনুষ্ঠানে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা খ্রীস্টান ধর্মীয় সংগীত এবং অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।