সন্ত্রাসের ঝুঁকি ও এর প্রভাব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও নিরাপদ বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে বৈশ্বিক থিংক ট্যাংক ‘ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি)’ প্রকাশিত ২০১৮ সালের বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। ঝুঁকির র্যাঙ্কিংয়ে (সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ) যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ২০তম। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম।
এ বছরের সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ উন্নতি হয়েছে। সন্ত্রাসের ঝুঁকি ও এর প্রভাব সম্পর্কিত ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৬৯৭। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ১২ ধাপ পিছিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ৬ দশমিক শূন্য ৬৬।
গত বছরের মতো এ বছরও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা শীর্ষ পাঁচটি দেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ দেশগুলো হলো—ইরাক (স্কোর ৯ দশমিক ৭৪৬), আফগানিস্তান (স্কোর ৯ দশমিক ৩৯১), নাইজেরিয়া (স্কোর ৮ দশমিক ৬৬০), সিরিয়া (স্কোর ৮ দশমিক ৩১৫) ও পাকিস্তান (স্কোর ৮ দশমিক ১৮১)।
র্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ স্থানে সোমালিয়া ও সপ্তম স্থানে ভারতের অবস্থান। ইয়েমেন, লিবিয়া ও ফিলিপিন্স আছে সন্ত্রাসের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ১০ দেশের তালিকায়।
ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস প্রতিবেদনে বলেছে, ষষ্ঠ বছরের মতো তারা বৈশ্বিক সন্ত্রাস ঝুঁকি সূচক প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদন থেকে গত ২০ বছরে (১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল) বিশ্বের বড় বড় সন্ত্রাসী হামলার প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এ বছরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের জন্য সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে আছে ভুটান (বৈশ্বিক র্যাংকিয়ে ১৩৫তম)। এরপর আছে শ্রীলঙ্কা (৪৯তম), নেপাল (৩৩তম) ও বাংলাদেশ (২৫তম)। গত এক বছরে বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে পরিস্থিতির উন্নতির চিত্র ফুটে উঠেছে স্কোরের হিসাবে। স্কোর কমেছে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার।
সন্ত্রাসের সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়া দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ দশে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত রয়েছে। তবে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বিবেচনায় আফগানিস্তান ইরাককে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত ১৬ বছরে শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সন্ত্রাসী হামলা কমার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে আইএসআইএল (জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভেন্ত, সংক্ষেপে আইএস) ও এ সম্পর্কিত গোষ্ঠীগুলোর হামলা লক্ষ করা গেছে। এর উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ২৮ জনকে হত্যা এবং আইএসের কথিত দায় স্বীকারের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর দ্য স্টাডি অব টেররিজম অ্যান্ড রেসপন্সেস ইন টেররিজম’ (এসটিএআরটি), বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিষয়ক তথ্যভাণ্ডার ‘গ্লোবাল টেররিজম ডাটা বেইস’-এর (জিটিডি) তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই সিডনিভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস বৈশ্বিক সন্ত্রাসের ঝুঁকি সূচক প্রকাশ করে। এসটিএআরটি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ‘গ্লোবাল টেররিজম ডাটা বেইসে’ ১৯৭০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এক লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি সন্ত্রাসী হামলার তথ্য রয়েছে।