রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ যোগসাজশ এমনকি কোনো কোনো দলের শীর্ষ নেতা পর্যন্ত বিস্তৃত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও আইএসআইর রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। জানা গেছে, সৌদি আরবের জেদ্দায় গত ৪ জুলাই তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআইর শীষর্স্থানীয় দুই কর্মকর্তার একটি বৈঠক হয়েছে।
দুবাই বিএনপির এক নেতার মাধ্যমে তারেক রহমান আইএসআইর সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদের মধ্যে যোগাযোগের এ রকম আরও একাধিক মাধ্যম রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনে আইএসআইর পছন্দের প্রার্থীদের একটি তালিকা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছেছে দুবাইয়ের এক বিএনপি নেতার মাধ্যমে।তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আইএসআই কানেকশনের অভিযোগ অনেক পুরনো। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের মেয়াদকালে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ভ্রের ডন দাউদ ইবরাহিমের সঙ্গে তার বৈঠকেরও অভিযোগ আছে। সাম্প্রতিক আইএসআই যোগাযোগ প্রমাণ করে, বিএনপির এই শীর্ষ নেতা তার পুরনো যোগাযোগগুলো থেকে মোটেও সরে আসেননি।
দুবাইতে বিএনপির যে নেতা আইএসআইর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন তার নাম জাকির হোসেন, তিনি বিএনপির সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সভাপতি। আইএসআইর যে এজেন্টের সঙ্গে তার নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে তার নাম শহীদ মেহমুদ। নথিপত্রে যে তথ্য তাতে দেখা যায়, গত ছয় মাসে দুবাইতে এ দুজন বিভিন্ন হোটেলে অন্তত ১১ বার দেখা করেছেন। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর এ দুজন দেখা করেন।
একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জাকির হোসেন লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। পাকিস্তানি এজেন্টের সঙ্গে বৈঠকে তিনি তারেক রহমানকে ‘বস’ বলে উল্লেখ করেন এবং আইএসআইর বার্তা তারেক রহমানকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। এ থেকে বোঝা যায়, জাকির হোসেন আসলে দুই পক্ষের মধ্যে একটি যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করছেন।
দুবাইতে অবস্থানরত শহীদ মেহমুদের সম্পর্কে খোঁজখবর করে দেখা গেছে, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আইএসআইতেই ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পরও আইএসআই এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মেহমুদ নামে যে আইএসআই এজেন্টের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেই এজেন্টই শহীদ মেহমুদ। তিনি আইএসআইর নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং মূলত জাভেদ মেহদীর সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেন।
জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের একাধিক কথোপকথন থেকে জানা যায়, এ বছরের ৪ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দায় তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআইর শীর্ষ কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদীর বৈঠক হয়েছে।
এ বছরের জুনে আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ ও বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের একটি বৈঠক হয়। এতে শহীদ মেহমুদ জেদ্দায় আইএসআইর ‘নম্বর ওয়ান নীতিনির্ধারক’ ও জাভেদ মেহেদীর সঙ্গে জাকির হোসেনের ‘বস’-এর আসন্ন বৈঠক নিয়ে ব্রিফ করেন। শহীদ মেহমুদ জাকির হোসেনকে বলেন, তিনি যেন তার ‘বস’কে বলেন, এ বৈঠক জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জুনেই আরেক বৈঠকে শহীদ মেহমুদ জাকির হোসেনকে জানান, জেদ্দায় নির্ধারিত ওই বৈঠকটি ৪ জুলাই বিকাল ৪টায় হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। তারেক রহমানের তরফ থেকেও যাতে বৈঠকে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। শহীদ মেহমুদ জাকির হোসেনকে আরও বলেন, পাকিস্তানের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যাতে তার ‘বস’ সবকিছু আলোচনা করেন, কেননা তিনি আইএসআইর সর্বময় কর্তা। সেখানেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৪ থেকে ৬ জুলাইর মধ্যে জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের মধ্যে পরবর্তী আরও কয়েকটি ফোনালাপে এটা স্পষ্ট যে, ৪ জুলাই জেদ্দায় নির্ধারিত ওই বৈঠকটি হয়েছিল। জাকির হোসেন ওই বৈঠককে ‘সফল’ বলে উল্লেখ করেন।
গত ৪ জুলাই জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের বিবরণ থেকে জানা যায়, আইএসআই তাদের পছন্দের প্রার্থীদের একটি তালিকা জাকির হোসেনকে দিয়েছে। জাকির হোসেন তারেক রহমানের এই তালিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেন।
এসব কথোপকথন থেকে এটা স্পষ্ট যে, লন্ডনে তারেক রহমান পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। এ যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুবাইতে আইএসআইর এজেন্ট একটি বড় মাধ্যম। তবে এসব কথোপকথন থেকে স্পষ্ট, দুই পক্ষের যোগাযোগের আরও মাধ্যম আছে।