একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মোট প্রার্থীর তালিকায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা এখনও আটকে আছে ৪ শতাংশের মধ্যে, যা নিয়ে সন্তুষ্ট নন নারী অধিকারকর্মীরা।
জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি ছিল নারী অধিকার সংগঠনগুলোর। তবে তাদের সেই দাবি দশম সংসদেও পূরণ হয়নি।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে রাজনৈতিক দলুগলোর জন্য বিধিমালা প্রণয়নের সময় ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত দিয়েছিল। তবে গত এক দশকেও কোনো দল তার ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেনি।
দুই বছর জরুরি অবস্থার সময় বাদ দিলে গত দুই যুগের বেশি সময় দেশে বাংলাদেশের সরকার ও সংসদে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। গত দুটি সংসদে স্পিকারের দায়িত্বেও আছেন একজন নারী। কিন্তু আইনসভায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে খুব ধীর গতিতে।
১৯৭১ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন মাত্র দুই জন নারী। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০ জন এবং তার আগে নবম সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জন নারী প্রার্থী ছিলেন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ১১৮ জন মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ জন।
স্বতন্ত্র ৯৯ জন ও দলীয় ১৭৪৯ জনকে নিয়ে তিনশ আসনে এবার মোট প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ১৮৪৮ জন। অর্থাৎ প্রার্থীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩.৬৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু একুশে নিউজকে বলেন, “নারী প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে এটা ইতিবাচক। তবে যে হারে বাড়ছে তা কোনোভাবেই আশাব্যঞ্জক নয়। রাজনৈতিক দলগুলো নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে- এই প্রত্যাশা আমরা করি।”
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। কমিটিতে প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি ভোটেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তা না হলে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না
একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে ৬৮ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন; এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে ‘নৌকা’ প্রতীকে ২০ জন, বিএনপির হয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ১৪ জন, জাতীয় পার্টির ‘লাঙল’ নিয়ে ৫ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৬ জন ভোট করছেন।
এছাড়া ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির (এনপিপি) ৪ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) ৩ জন, জাকের পার্টির ৩ জন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের ২ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ২ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন ভোটের মাঠে।
এছাড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, গণফ্রন্ট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন করে নারী প্রার্থী নির্বাচন করছেন।
জাতীয় পার্টির ‘লাঙল’ প্রতীক নিয়ে দলটির কো-চেয়ারম্যান রওশান এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ ও ৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার একাধিক আসনে নির্বাচনে থাকা একমাত্র নারী প্রার্থী তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনগুলোতে একাধিক আসনে প্রার্থী হলেও এবার তিনি কেবল টঙ্গীপাড়ার আসন থেকেই ভোট করছেন। রংপুরে তার আসনে নির্বাচন করছেন স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবার তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে।
চূড়ান্ত প্রার্থিতা পরে আদালতের নির্দেশনার পর প্রার্থী বাড়তে ও কমতে পারে। ৩০ ডিসেম্বরের আগে তা চূড়ান্ত হবে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকটি আসনের প্রার্থিতা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
“যেখানে প্রার্থী একদম চূড়ান্ত হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যালট ছাপিয়ে ফেলব। কারণ আমরা চাই এক সপ্তাহ আগে ব্যালট মাঠে চলে যাক। যেখানে সমস্যা আছে সেখানে ব্যালট আমরা একটু পরে ছাপাব। হাই কোর্ট থেকে নির্দেশনা পেলে আমাদের সেইভাবে সমন্বয় করতে হবে।”
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ২০জন নারী প্রার্থী
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ১৫জন নারী প্রার্থী