তার সিনেমা মানেই সুপারহিট। যে ক’জন অভিনেতা অভিনয়ের সম্মোহনী শক্তির মাধ্যমে দর্শককে আকৃষ্ট করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছতে পেরেছিলেন, ফারুক তাদেরই একজন।ঢাকাই চলচ্চিত্রে ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। সিনেমার গল্পে অনেকবার হয়তো ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, মাঠ কাঁপানো বক্তৃতাও হয়তো করেছিলেন, হয়েছিলেন বিজয়ীও। কিন্তু এবার সিনেমায় নয়, বাস্তবে রাজনীতির মাঠে সওয়ার হলেন সুপারস্টার ফারুক। প্রচারণার শুরু থেকেই আলো ছড়াচ্ছেন, যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই সিক্ত হচ্ছেন মানুষের ভালোবাসায়।
ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই জনসভা, নির্বাচনী প্রচারণা ও দলীয় কর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।
রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় তার প্রচারণা শুরু হয়। এর আগেই নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। বিকেল সাড়ে ৩টায় ফারুক পৌঁছার পর নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তাকে। এর পর নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে প্রথমে তিনি রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটে প্রবেশ করেন। ওই মার্কেটের দোকান ও উপস্থিত জনতা সবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কুশল বিনিময় ও লিফলেট বিতরণ করে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। প্রায় আধঘণ্টা সেখানে প্রচারণা চালান তিনি। এর পর শত শত দলীয় নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে একে একে কচুক্ষেত বাজার, তামান্না, কচুক্ষেত পুরান বাজার, মুক্তিযোদ্ধা সড়ক ও সেনাপল্লী স্কুল এলাকায় চলে তার প্রচারণা। এসব এলাকার প্রতিটি অলিগলিতে ঘুরেছেন তিনি।
জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে একনজর দেখার জন্য বাসাবাড়ির সামনে ভিড় করেন মানুষ। অনেকে ছাদ, বারান্দা থেকে উঁকি দেন। কাউকেই নিরাশ করেননি ফারুক। প্রত্যেকের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। নিজের হাতে লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেন। নেতাকর্মীরাও তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। নৌকায় ভোট চেয়ে ক্লান্তিহীন স্লোগানের মাধ্যমে তারা রাজপথ মুখরিত করে রাখে।
সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ফারুক বলেন, ‘এই আসনটি আমার জন্য নতুন। এরপরও মনে হয়, এলাকার মানুষগুলো অনেক দিনের চেনা, পুরনো সম্পর্কে আবদ্ধ। সেই পুরনো মানুষগুলোকে যখন চোখে দেখি, তখন এই জায়গাটি মনে হয় আমারই জায়গা। যেন জায়গাটিতে আমি হাজার বছর ধরে বাস করছি।’
কৃতজ্ঞতা জানান দল ও দলীয় সভানেত্রীর প্রতি। বলেন, ‘জণগনের সেবা করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে উপহার দিয়েছেন চেষ্টা করব তার মর্যাদা রক্ষার। প্রধানমন্ত্রী সবার মুখে হাসি দেখতে চান। এই হাসি ফোটাতে হলে যা যা করা দরকার সবই করব।’
রাজধানীর অভিজাত এলাকা খ্যাত গুলশান ও বনানী থানা নিয়ে ২০০৮ সালে ঢাকা-১৭ আসনটি গঠিত হয়। ওই বছর মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক লাখ ২৩ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ পান ৫৬ হাজার ২৬৭ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীদের বাইরে দুটি রাজনৈতিক দল ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে বিএনএফের এসএম আবুল কালাম আজাদ ৪৩ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্য দুই প্রার্থী জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আবদুল লতিফ মল্লিক ২২ হাজার ৪৬ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ হান্নান মৃধা পান ৪ হাজার ৪৬ ভোট। এবার ফারুকের বিপরীতে আছেন আরও তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতা ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ।
তাদের মধ্যে এরশাদ অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই অবস্থা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদারও। এ আসনে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় ফারুকই এগিয়ে রয়েছেন। তবে অভিজাত এলাকাটির সংসদ সদস্য হিসেবে শেষ হাসি কে হাসবে তা দেখার অপেক্ষায় আছে রাজধানীবাসী।