কিডনি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দেশের ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি বেশি বেশি নার্স, প্যারামেডিক্স ও কিডনি বিশেষজ্ঞ তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করাও জরুরি।
রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দুদিনব্যাপী ১৪তম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের শেষদিনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের মৃত্যুর ৬ষ্ঠ কারণ কিডনি রোগে ৮৫ কোটি লোক ভুগছে। বাংলাদেশে দুই কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত যাতে বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ লোক। ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের অভাবই এই মৃত্যুর প্রধান কারণ। মাত্র ২০ ভাগ মানুষের জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে ৫০ ভাগ কিডনি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল আলম।
কিডনি রোগের ওপর আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনারে অধ্যাপকরা আলোচনা করেন যাতে কিডনি চিকিৎসকরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে মানবসেবায় নিঃস্বার্থ অনুদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কিডনি ফাউন্ডেশনের পক্ষে বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সুবল দাস, মোয়াজ্জেম হোসেন, মঞ্জুরুল হক এবং ইঞ্জিনিয়ার এস এম খোরশেদ আলমকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে রয়েছে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসা নেয়। এসব লোকের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে কি-না, প্রস্রাবের সঙ্গে মাইক্রো অ্যালবুমিন বা অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি-না তা যদি জানা যায়, তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ শনাক্ত করা যায়। এরপর তাদের যথাযথ চিকিৎসা দিলে ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে ক্রনিক কিডনি রোগ থেকে রা করা যায়। তাই এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি।
অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ জানান, কিডনি রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ৮০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে, দুই কোটি লোক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসা ও সচেতনতা জরুরি। এই রোগ প্রতিরোধে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, অতিরিক্ত লবণ পরিত্যাগ, হরহামেশা ব্যথানাশক ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন, ফাস্টফুড, চর্বি জাতীয় ও ভেজাল খাবার, ধূমপান বর্জন করা উচিত। এছাড়াও কারও কিডনি রোগ হোক বা না হোক বছরে অন্তত একবার কিডনি ফাংশন পরীক্ষা করা উচিত।