ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি নম্বর ৯৯৯’তে কল দিয়ে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে চার কিশোরী। শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে বন্দিদশা থেকে তাদের চারজনকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ। এ সময় দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর রামখণ্ড গ্রামের আ. আজিজ মোল্লার মেয়ে রুপা (৪৫) ও কুমিল্লার চান্দিনানগর উপজেলার বিটতলা গ্রামের ওহেদ মিয়ার মেয়ে সুমি (৩০)।
উদ্ধার হওয়া এক কিশোরী জানায়, সে দিনাজপুর সদর উপজেলার শেরপুর তেলিপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বাল্যকালে বিয়ে হয় তার। স্বামী তার অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করলে সে রাগে-দুঃখে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। গত কোববানীর ঈদের আগে সে কাজের সন্ধানে ট্রেনে এসে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে নামে। রেলস্টেশনে তার সঙ্গে আলাপ হয় শুভ নামে এক ব্যক্তির। প্রথম দিকে নিজের কষ্টের কথা শুভকে সে বলতে চায়নি। শুভ তাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে জানায়, কাজের সন্ধানে সে ঢাকায় এসেছে।
এ সময় শুভ তাকে জানায়, তার বিউটি পার্লারের ব্যবসা আছে। ইচ্ছা করলে সে সেখানে কাজ করতে পারে। ভালো বেতনের আশ্বাস দিলে সে শুভর কথায় রাজি হয়ে যায়। এরপর শুভ তাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রুপা বাড়ির মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়। রুপা অপর এক বাড়ির মালিক সুমির সহযোগিতায় তাকে আটকে রেখে মারপিট করেন এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে দেহব্যাবসায় বাধ্য করেন। তার সঙ্গে একই উপায়ে আটকে রাখা হয় ১৪, ১৫ ও ১৬ বছর বয়সী আরও তিন কিশোরীকে। তাদেরও বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শুভ দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিক্রি করেছেন।
ওই কিশোরী আরও জানায়, তারা প্রত্যেকেই এই অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাত ২টার দিকে তার কাছে আসা এক ব্যাক্তির মোবাইল থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে উদ্ধারের আকুতি জানায় সে। এরপর গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ ভোরে তাদের উদ্ধার করে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফী জানান, খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে চারজনকেই উদ্ধার করা হয়। এসময় ঘটনায় জড়িত দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের পক্ষ একজন তিনজনকে আসামি করে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করেছে। পলাতক আসামি শুভর কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তবে তার মোবাইল নম্বর জানা গেছে। এ সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।