একাদশ সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে ধানের শীষের একাধিক প্রার্থী দেওয়ার প্রেক্ষাপটে আরও দুজনের সঙ্গে সাকিলাকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।এর মধ্যে বিএনপি নেতা মীর মো. নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর মো. হেলাল উদ্দিন দুজনেরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয় দুর্নীতি মামলায় সাজার কারণে। তাদের ছিটকে পড়ার প্রেক্ষাপটে ওই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে সাকিলাই প্রার্থী হিসাবে রইলেন।
ফলে আপিলেও মীর নাছির কিংবা হেলাল প্রার্থিতা ফেরত না পেলে আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সাকিলাকেই দেখা যেতে পারে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে এখন সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; এই মন্ত্রী এবারও মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে যাচ্ছে । জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার জন্য বিএনপিকে বরাবরই দায়ী করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা; এর মধ্যেই সাকিলাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়।
জঙ্গি সংগঠন হামজা বিগ্রেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৮ অগাস্ট ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাকিলাকে; তার দুই সহকর্মী আইনজীবীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেদিন। গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়।
এরপর হাটহাজারীর আবু বকর মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে জঙ্গিদের ‘তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ পাওয়ার ঘটনায় হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাস ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাদের। কয়েকদফা রিমান্ড শেষে সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ২০১৬ সালের ৭ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান শাকিলা।
হেফাজতে ইসলামের দুই কর্মীর কথায় ব্যারিস্টার সাকিলা শহীদ হামজা বিগ্রেডের সংগঠক মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক কোটি আট লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলে তার আইনজীবী দাবি করেছিলেন। আইনজীবী আবদুস সাত্তার তখন বলেছিলেন, হেফাজত নেতাদের সাড়ে তিনশ মামলা পরিচালনার জন্য তাদের কাছ থেকে সাকিলা ওই টাকা পেয়েছিলেন এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় তা ফেরত দেন।
ওই অর্থ সানজিদা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন শাকিলা। তবে অ্যাকাউন্টটি যে মনিরুজ্জামান ডনের, তা তার জানা ছিল না বলে তার আইনজীবী সাত্তারের দাবি।
চট্টগ্রামের এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল হাশেম একুশে নিউজকে বলেছিলেন, “মনিরুজ্জামান ডন জবানবন্দিতে বলেছেন, সানজিদা এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এবং এ টাকা দিয়ে বাঁশখালীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র কেনা হয়েছে। মামলা না চালানোয় টাকা ফেরত দেওয়ার যে দাবি এখন করা হচ্ছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সাকিলার মা ফরিদা ওয়াহিদের দাবি, তার মেয়ে বিএনপির হয়ে অনেক মামলা লড়ায় ‘শাস্তি’ দিতে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।
সাকিলার বাবা প্রয়াত ওয়াহিদুল আলম বেশ কয়েকবার হাটহাজারী থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন, হুইপের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদেও ছিলেন ওয়াহিদুল। চট্টগ্রামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হয়েছে জানিয়েছেন মীর হেলাল।
আপিলে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি একুশে নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে তাদের সাজায় স্থগিতাদেশ থাকলেও চট্টগ্রাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘ভুল তথ্য থাকায়’ মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
“আমরা প্রতিকার চেয়েছি। আমরা দুইজনেই আপিল করেছি।“
অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ গুলশান থানায় মামলা করে দুদক। বিশেষ জজ আদালত ওই বছর ৪ জুলাই মীর নাছিরকে ১৩ বছর এবং বাবাকে সহযোগিতার জন্য মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। তারা আপিল করলে হাই কোর্ট ২০১০ সালে দুজনের সাজাই বাতিল ঘোষণা করে।
দুদক হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৪ সালের ৪ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত খালাসের রায় বাতিল করে হাই কোর্টে দুজনের আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয়। মীর নাছির ও তার ছেলের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় আগের রায়ই বহাল থাকল।