অফিস টাইমে কোনও চিকিৎসক যদি প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উদ্দেশ্যে হাসপাতালের বাইরে যান, তবে সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সমান্ত লাল সেন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অফিস টাইমে যে হাসপাতালের বাইরে যাবে, সে যেই হোক না কেন, আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ভুল চিকিৎসা বলতে কিছু নেই, ভুল চিকিৎসা বলার অধিকার আমাদের কারও নাই। আমরা কথায় কথায় দেখি ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে চিকিৎসকদের ওপর আক্রমণ হয়।
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের উদ্দেশ্যে আমি বলি, ভুল চিকিৎসা বলার অধিকার একমাত্র আছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)। কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যদি সেখানে কমপ্লেইন করা হয়, তারা যাচাই-বাছাই করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলাজনিত কারণে বিএমডিসি তাদেরকে শাস্তির আওতায় এনেছে। সুতরাং হুট করে আমরা ভুল চিকিৎসা বলে দেবো, সেটি কিন্তু হয় না।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যদি চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠে এবং প্রমাণিত হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সারা দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে আমি একটি কথাই বলি, আমি এই জায়গায় আসব তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
এর আগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার ভালো দিক আছে, সবসময় আমরা সেগুলোর মূল্যায়ন করি। তেমনি কিছু খারাপ দিক আছে, সেই দিকটাও আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সেই অনুযায়ী আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আজ যেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসেছি, সেটিও কিছুদিন আগে নানা বিষয়ে সমালোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, সেটি তারা করতেই পারেন, এটা তাদের অধিকার। কিন্তু আমি উপলব্ধি করেছি এবং দেখেছি, কিছু চিকিৎসক ১২টার আগেই তাদের প্রাইভেট চেম্বারে চলে যান। কিছুদিন আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন চিকিৎসক অফিস চলাকালীন প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে অপারেশন করেছেন, এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই রোগীটি মারা যান। আমার কাছে যখন খবরটি এসেছে, আমি তখন লজ্জায় মাথা উঠাতে পারছিলাম না। এই বিষয়গুলো আমাদের কঠোরভাবেই দেখতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।