শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

গেরিলা ১৯৭১

একুশে ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময় : ১৮ মার্চ, ২০২৩, ৮:৪৬
  • ১১৭ এই সময়
  • শেয়ার করুন

সন্ধ্যার পরে মাঝেমধ্যে মহল্লার গলিতে এক বাঁশিওয়ালার দেখা পাওয়া যায়। সে তার কাঁধে বাঁশিভর্তি ঝোলাটা ঝুলিয়ে রেখে আপন মনে হাতের বাঁশিটিতে মোহনীয় সুর তোলে। খুব ধীর গতিতে হাঁটতে থাকা লোকটির বাঁশি থেকে বের হতে থাকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক আর বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় রোমান্টিক সব গান।

“এই পদ্মা এই মেঘনা”, “একবার বিদায় দে মা”, “একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল”……. থেকে শুরু করে “তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়”, “এ আমার গুরুদক্ষিণা”, ” আমি একদিন তোমায় না দেখিলে”, কিংবা “আমার বুকের মধ্যেখানে মন যেখানে”….. ইত্যাদি।

অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে অনেকেই ভিড় করে তার চারপাশে। এক সময়ে দেখা যায় হুজুগে কয়েকজন বাঁশিও কিনে ফেলেছে। তারপর শুরু হয় তাদের বাঁশি নিয়ে নানান কসরত। বাঁশিকে একবার সোজা সামনের দিকে খাড়া করে কিংবা নিচে নামিয়ে টানা ফুঁ মারা, মারতেই থাকা। সুরের পরিবর্তে যখন শুধুই প্যাঁ পোঁ আওয়াজ বেরোয়, তখন তারা যেন বুঝে ফেলে আসল ব্যাপারটা – ” আরে তাই তো, ফুটোগুলোতে তো আঙ্গুলই দেই নাই, সুর আসবে কোত্থেকে ?” আবার শুরু হয় বুক ফুলানো ফুঁ আর সাথে বাঁশির ফুটোগুলোর মধ্যে আঙ্গুলের অস্থির নাড়াচাড়া !

তারা ভুলে যায় বাঁশি বাজানোটা গুরুমুখি বিদ্যা, সাধনার ফল। বাঁশি কিনে ফেলা মানেই বাঁশিতে সুর তোলা নয়। কিন্তু এরা তা বুঝতেই পারে না। আর বাঁশিওয়ালাও একবারের জন্যে জানিয়ে যায় না যে তার গুরু কত চেষ্টায় তাকে এই দক্ষতা তৈরি করে দিয়েছে।

এদিকে বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরেও যখন আর কোন সুর হয় না, তখন তারা হুজুগে ক্রেতারা একে অন্যকে বুঝিয়ে দেয় – “নাহ, আসলে বাঁশির ‘কাঠ’টাই ভাল না। ঐ ব্যাটার নিজের বাঁশির ‘কাঠ’টা ঠিকই ভাল ছিল। নাহলে বাঁশি বাজানো কোন ব্যাপার না। কত বাজাইছি এক কালে।”

কেউ কেউ আরেক ধাপ এগিয়ে বলে, ” এখন আর ভাল কাঠ পাইব কই ? আমাদের দেশের বাড়িতে আগেকার আমলে যারা বাঁশি বেচতে আসত, এত ভাল বাঁশি ছিল ওগুলা যে ফুঁ দিলেই চ্যালচ্যালাইয়া সুর বাইর হইত।”

তারপর সমস্ত রাগ ক্ষোভ বাঁশির কাঠের উপর ঝেড়ে ছুঁড়ে ফেলে যায় বাঁশিগুলো এদিক সেদিক। যে বাঁশির ‘কাঠ’ ভাল না, সেই বাঁশি বাসায় নিয়ে লাভ কী ?

বাঁশিগুলো পরে থাকে অনাদরে।

অথচ কী দুর্দান্ত ক্ষমতা ছিল ওগুলোর সুরের জাদুতে ভাসিয়ে নেয়ার!

তা আর সম্ভব হল না শুধু ফেরিওয়ালার মানসিকতা আর ক্রেতাদের অবুঝ অধৈর্য মনোভাবের জন্য।

আমাদের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যারাই এখন মাঠেঘাটে সুর তুলেন, তারা শুধু নিজেদের জাহির করতেই ব্যস্ত। তারা যদি নিজেদের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই আবেগ আর ত্যাগটুকু ধারণ করতেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সত্যিই লালন করতেন, তাহলে সারা দেশের সবার মনেই সুর তোলা শেখার আগ্রহ তৈরি হত, শুধু বাঁশি কেনার নয়।

অন্যদিকে ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর আসলেই কেউ আর খুলে বসতো না আগের আমলের হালখাতা। অন্তত বিজয়ের দিনে যে পরাজিত আমলের হালখাতা খুলতে নেই এ বোধটুকু তাদের তৈরি হত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে ইউনিট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় সকল পর্যায়ে দোয়া এবং কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। হওয়ার কথাই এবং হওয়াই উচিত।যারাই এইসব উদযাপনের অংশ ছিলেন, ছবি তুলেছেন ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য। এটাও স্বাভাবিক ব্যাপার।

বেশ অনেক জায়গায় দেখা যায় কেকের ওপর বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার ছবিও আছে যা ক্রিম দিয়েই তৈরি। অর্থাৎ, ভক্ষনোপযোগী।

প্রশ্ন হল, কেক কেটে খন্ড খন্ড করার সময়, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার উপরে ছুরি চালিয়ে ছিলেন কে কে ? এই টুকরোগুলোই বা কার কার মুখে গিয়েছে ? এই সব নেতা কারা ?

এগুলোর ছবিও তুলেছেন তো ?

‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আমি অন্তত দু’জন মানুষের কথা শুনেছিলাম, যারা তাদের জীবদ্দশায় আর কোনদিন মাংস খান নি। তারা ১৬ আগস্টের সকালের নাস্তায় মাংস খাবার সময় মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের খবরটি শুনতে পান এবং তাদের মনে হয়েছিল তাদের পাতের মাংসের টুকরাটি বঙ্গবন্ধুর শরীরের। সেটাই ছিল তাদের জীবনে পাতের শেষ মাংস। এরা কেউই আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না। সাধারণ মুজিব ভক্ত ছিলেন।

আজ রাস্তায় হাঁটতে গেলেই যার সাথেই ধাক্কা লাগে সেই আওয়ামী লীগের ‘নেতা’। আর যে নেতার সাথে একজন অন্তত হাঁটে, সেই নাকি ‘জননেতা’!

আর, এজন্যই কেকের গায়েও নেতার ছবি খাওয়া হয়ে যায়। অজস্র জননেতার ভিড়ে, মূল নেতার হারিয়ে যাওয়া কে আর দেখে?

ছবি- সদ্য স্বাধীন দেশের রাজধানীর বুকে তাঁরা এসে ছিলেন, যাদের প্ৰত্যহ প্রভাত সুর্য কুর্নিশ করে। তুলে ছিলেন শ্রদ্ধেয় রশিদ তালুকদার।

🖋 লিখেছেন প্রিয়-শ্রদ্ধেয় সুহৃদ, সাকু চৌধুরী

এই বিভাগের আরো খবর

ব্রেকিং:

আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পাকিস্তানের

১৭ জেলায় হতে পারে ৬০ কিমি বেগে ঝড়, সতর্ক সংকেত

সরকারি হাসপাতালগুলোতে আছে রাসেল’স ভাইপারের এন্টিভেনম

বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে, কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণের শঙ্কা

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অচল ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

স্ত্রীকে ফেসবুক থেকে দূরে রাখা নিষ্ঠুরতার শামিল

রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়ি ঘিরে রেখেছে এটিইউ

ধনী কর্মকর্তাদের সম্পদের উৎসের খোঁজ শুরু করছে দুদক

টি-২০ বিশ্বকাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরার পুরস্কার পেলেন যারা

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মানতে হবে যেসব বিশেষ নির্দেশনা