ভালো মানের বীজ ও কৃষির নতুন নতুন কৌশল প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সিড কংগ্রেস- ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় ও দেশের ক্রমহ্রাসমান জমি হতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কৃষির একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারি বীজ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি বীজ প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রাখতে পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘সিড কংগ্রেস- ২০২৩’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
এছাড়া সরকার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে চায় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এজন্য এবারের সিড কংগ্রেস এ ভিশন বাস্তবায়নে গতি সঞ্চার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সরকার দেশের কৃষক ও কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নিরলস কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি প্রধান এ দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে কৃষিতে ভর্তুকি, প্রণোদনা প্রদান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের লাভের কথা বিবেচনা করে সরকার কয়েক দফা সারের দামসহ কৃষি উপকরণের দাম কমিয়েছে। সেচের জন্য ডিজেলে ভর্তুকি ও গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।
এদিকে কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ করে দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি ও কৃষকের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি কৃষি পেশার মর্যাদা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে কৃষি কর্মকর্তাদের মর্যাদা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন।
তিনি বলেন, ‘কৃষি গবেষণা জোরদার করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পুনর্গঠন করেন। এছাড়া তিনি অন্যান্য ফসলের গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ এবং উন্নয়ন বাজেটে কৃষিতে সর্বাধিক বরাদ্দসহ অনেক গণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা কৃষি উন্নয়নে বীজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেশে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়া কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে ‘রাষ্ট্রপতি কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তন করেন।
উল্লেখ্য, আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘সিড কংগ্রেস- ২০২৩’। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এ মেলার শুভ উদ্বোধন করবেন।
এ মেলায় ১৩টি প্যাভিলিয়ন ও ৬০টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে ১০টি বিদেশি স্টল থাকবে ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল প্রতিষ্ঠান স্টলসহ মেলায় অংশগ্রহণ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল সিড ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল কেলার, এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মানিশ প্যাটেল ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিমসন উপস্থিত থাকবেন।