আগামী নির্বাচনে আবার দায়িত্ব পেলে পাঁচ বছরে প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই লক্ষ্য স্থির করেই দেশের পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পরিকল্পনার মূল বিষয়সহ অগ্রাধিকার খাতগুলো থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে। দলের একাধিক সূত্রে এই পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
জানা গেছে, রূপকল্প-২১ এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন জাতিকে উপহার দেবেন একটি নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এ নতুন রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদ। বাঙালী হবে সারা বিশ্বের মাঝে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত জাতি। রূপকল্প-২১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নের প্রয়াস সামনে রেখে উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য গৃহীত দশ অগ্রাধিকার খাত বাংলাদেশের ভবিষ্যত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচী প্রণয়ন সহায়ক হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান ॥ তরুণ সমাজকে চাকরি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে দশ মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে বেসরকারী খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে। দেশে উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি হবে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র। এ কারণে দেশে দ্রুত দশ মেগাপ্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্যের অন্যতম। এই লক্ষ্য অর্জনে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা আওয়ামী লীগের বিঘোষিত নীতি। ইতোমধ্যে হতদরিদ্রের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করা হয়েছে। ফলে দারিদ্র্য কমেছে ১০ শতাংশ। হতদরিদ্র, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চলমান প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ আশ্রয়ন, গৃহায়ণ, আদর্শ গ্রাম ও ঘরে ফেরা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের অবসান ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্জিত উন্নয়নের পথে এখন সবচেয়ে বড় বাধা আইনের শাসন, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং জনজীবনের নিরাপত্তাবিনাশী বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াত চক্র। গণতন্ত্রের নামে তারা অরাজকতা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ শান্তি বিনাসী সকল অপকর্মে ইন্ধন যোগাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট অবস্থান এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইনী পন্থায় যে কোন ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কর্মকা- প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে।
বিদ্যুত ও জ্বালানি ॥ বিদ্যুত ও জ্বালানির ক্ষেত্রে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা ও আরও দ্রুত করা হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে তেল, গ্যাস, কয়লা, জলবিদ্যুত, বায়োগ্যাস ও জৈবশক্তি, বায়ুশক্তি ও সৌরশক্তিসহ জ্বালানির প্রতিটি উৎসের অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় গৃহীত বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বেসরকারী খাতে বৃহৎ বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্র মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিংয়ের ব্যবস্থা করে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০২১ সালে মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদন ৫১৪ কিলোওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে ৩৭১ কিলোওয়াট। ২০২১ সালে বিদ্যুতের আওতা ৯৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালে বিদ্যুত উৎপাদনে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেগাওয়াট। নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভারত-বাংলাদেশে-মিয়ানমারের ত্রি-দেশীয় গ্যাস পাইপ লাইনে অংশগ্রহণ করা হবে।
দশ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন ॥ দেশের উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন হয়। অর্থনীতির ভাষায় যাকে ‘সজোরে ধাক্কা’ (বিগপুশ) বলা হয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দশটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিমি রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এ সকল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্র সম্পদভিত্তিক উন্নয়ন ॥ শেখ হাসিনার কূটনেতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সমুদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনী এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সকল প্রকার সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমুদ্রখাত, যা ব্লু-ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সমুদ্রবন্দর, জাহাজ নির্মাণ, নৌ চলাচল, সাগরে মৎস্য চাষ, জলজ উদ্ভিদ, তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ আহরণ, সমুদ্রে জেগে উঠা নতুন চর, সামুদ্রিক পর্যটন শিল্প ইত্যাদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বেসরকারী খাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ॥ উন্নয়নের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বেসরকারী খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিখাত যাতে নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয়বর্ধন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগ সবসময় নীতিগত সমর্থন ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। বেসরকারী খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লাভের জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণদান, কর ও শুল্কনীতির প্রতি সমর্থন অব্যহত থাকবে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, ও বিদ্যুত ব্যবস্থায় যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে, তাকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে।
গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ॥ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনার অন্তরায়সমূহ দূর করেছে। ইতোমধ্যে গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।